সোনালী ব্যাংক থেকে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজের নেওয়া ঋণের সুদ মওকুফ ও নবমবারের মত ঋণ পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।
এ আদেশের ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ স ম ফিরোজের অংশগ্রহণের বাধা কাটল বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা।
আদালতে ফিরোজের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম ও তানিয়া আমীর। রিটকারী মো. জিয়াউল হকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ; সঙ্গে ছিলেন ও এম মাইনুল ইসলাম। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।
তানিয়া আমীর পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল সে আদেশটি আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই এখন।”
তিনি বলেন, “রিটকারী তার ব্যক্তিগত স্বার্থে রিটটি দায়ের করেছেন। কারণ ওই নির্বাচনী আসনে তিনিও প্রার্থী। ফলে রিটটি কোনোভাবেই জনস্বার্থে রিট না।”
এই আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের (বিআরপিডি) পঞ্চদশ সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করা যায় না বলে যে যুক্তি রিটে দেখানো হয়েছে, তা সাধারণ ঋণের বেলায়। এই ঋণটি একটি বিশেষ উৎপাদনমুখী, কৃষিমূখী ঋণ। এই ঋণের সঙ্গে শ্রমিকদের জীবিকা জড়িত।
“আর এই ঋণের পুনঃতফসিল তো হয়েই গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তার অনুমোদন করেছে। হাই কোর্টে তারা সেটি গোপন করেছে। তাছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল করাটা বৈধ না অবৈধ, সে মামলাটি তো হাই কোর্টে পেন্ডিং আছেই। সেটি তো আর স্থগিত করা হয়নি।”
আশির দশকে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক থেকে আ স ম ফিরোজের মালিকানাধীন মেসার্স পটুয়াখালী জুট মিলস লিমিটেড যে ঋণ নিয়েছিল সুদে-আসলে সে ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
গত ১৯ আগস্ট সোনালী ব্যাংক তাদের বোর্ড অব ডাইরেটরস-এর ৫৯৪তম সভায় ঋণের সুদ মওকুফ করে এবং ঋণের পুনঃতফসিল করে। ওই সিদ্ধান্ত গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গত সপ্তাহে হাই কোর্টে রিট করেন পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাউফলের পৌর মেয়র মো. জিয়াউল হক। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার রুলসহ এই আদেশ দেয়।
মেসার্স পটুখালী জুট মিলের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা মানতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় হাই কোর্টের রুলে।এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার-১৫ অনুযায়ী মেসার্স পটুখালী জুট মিলের ঋণ পুনঃতফসিল করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রিটকারীপক্ষের মাইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশনস অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের (বিআরপিডি) ১৫তম সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিল করা যায় না। কিন্তু মেসার্স পটুয়াখালী জুট মিলস লিমিটেডের নামে আ স ম ফিরোজের নেওয়া ঋণ সোনালী ব্যাংক ১৯৯৪ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত নয়বার পুনঃতফসিল করেছে।









