শেষ বারেরমত বেইলী রোডের বাসায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে আসা হয় ।সেখানে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, সহকর্মী এবং ভক্ত-অনুরাগীরা।
ব্যাংককের একটি হাসপাতালে মারা যাওয়া আশরাফের মরদেহ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তার মরদেহ গ্রহণে সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় আশরাফের কফিন উড়োজাহাজ থেকে নামানো হয়। সেখানেই তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা। জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এই মুক্তিযোদ্ধার কফিন।
এরপর সৈয়দ আশরাফের মরদেহ আনা হয় ঢাকার বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে। বিকাল থেকেই সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সহ্রসাধিক মানুষ।
বাড়ির ভেতরের খোলা জায়গায় সামিয়ানা টাঙিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ করে সেখানে সৈয়দ আশরাফের কফিন রাখা হয়। এরপর সারি ধরে দাঁড়িয়ে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ, যাদের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণির পেশার মানুষ ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক প্রয়াত নেতার কফিনে ফুল দেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান নওফেল, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, সংসদ সদস্য আসলামুল হক ও সাদেক খানসহ অনেক নেতাই উপস্থিত হন শ্রদ্ধা জানানোর মিছিলে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এই নেতাদের অধিকাংশই বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফের মরদেহ গ্রহণের জন্যে।সততা, নির্মোহ ও নির্লোভ মানসিকতা এবং রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় নিজের দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছেও শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববারের ভোটে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
সেখানে পরাজিত প্রার্থী বিএনপি নেতা রেজাউল করিম চুন্নুও ছিলেন তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোদের দলে। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুল আলমও ছিলেন তার সঙ্গে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ছিলেন। তার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।
তিনি সাংবাদিকদেের বলেন, “আমি আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে যে কয় দিন কাজ করেছি দুজনের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না। আমার আর উনার মতামতে মিল ছিল সব সময়ই। তিনি একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন।“উনি এতই ভালো মানুষ ছিলেন যে, পূর্ণমন্ত্রী হয়ে আশরাফ ভাই মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর যতো দিন আমার নতুন অফিসে মালামাল গোছানো না হয়েছে ততো দিন তিনি নিজের রুমে বসেননি। আমি আমার কক্ষে বসার পর থেকে তিনি ওই কক্ষে বসতেন। উনার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তিনি অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী মানুষ ছিলেন।”









