কপাল পুড়ল শোভন ও রাব্বানীর । চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে বাদ দিয়ে তাদের জায়গায় সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শোভন ও রাব্বানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে কয়েক শতাংশ চাঁদা দাবি করেছেন বলে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৮ সেপ্টেম্বর দলের এক সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে খবর প্রকাশ হয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক চিঠিতে গোলাম রাব্বানী এ বিষয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উপাচার্যের স্বামী ও ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে রাব্বানী লিখেছিলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
“এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”কিন্তুু শোভন-রাব্বানীর কোন চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত কাজে লাগেনি । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার তাদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সম্পাদক নিযুক্ত করে তাদের নাম ঘোষনা করেন।
শোভন-রাব্বানীর জাযগায় নেতৃত্বে আসা জয় ও লেখক দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি ছিলেন জয়, আর লেখক ছিলেন ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে গিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে তাদের দুজনকে আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
তারা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিবেন বলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল গত বছরের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। তার আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই শোভনকে সভাপতি ও রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সে হিসাবে আরও প্রায় ১১ মাস পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। সে পর্যন্ত জয় ও লেখকই সংগঠনটির নেতৃত্ব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বরিশালের ছেলে আল নাহিয়ান জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়েছেন। শোভনের সঙ্গে একই বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এখন ক্রিমিনোলজি বিভাগ থেকে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স করছেন জয়।
ছাত্রলীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা জয় তার আগে সার্জেন্ট জহরুল হক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়া লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ছাত্র। এখন স্নাতকোত্তর করছেন তিনি।
যশোরের মনিরামপুরের ছেলে লেখক ওই এলাকার সাংসদ ও গণপূর্তমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ভাতিজা। লেখক ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও জগন্নাথ হল শাখার বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।









