“হাঁস বিড়ালে খাইছে”
– ফয়েজ আহমেদ।
(বর্তমান প্রেক্ষাপটের একটি ছোট গল্প)
সেদিন ছিল সোমবার। ফকিরের হাট। সজিব হাটে গিয়ে হাস কিনবে। হাসের মাংস খুব প্রিয় সজিবের। বাজারের ব্যাগ নিয়ে মটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে হাটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় সজিব।
যাত্রা পথে কালুর মোড়ে অনেক লোকের সমাগম। মাইকের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বজ্র কন্ঠের এক জ্বালাময়ী ধারালো বক্তৃতা ভেসে আসছে সজিবের কানে। সে জ্বালাময়ী বক্তৃতা আর্কষন করছে সজিবের মন। কে করছে ওই জ্বালাময়ী বক্তৃতা। একটু দেখে যাই। সজিব মটরসাইকেলটা রেখে ভীড় ঠেলে সামনে যায়। আরে এ তো আমাদের ছলিমুদ্দিন ভাই। হ্যা ঠিকই চিনেছে সজিব।
ছলিমুদ্দিন একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। ওইতো পাশের গ্রামে বাড়ী। প্রায় রাস্তা পথে সজিবের দেখা হয় ছলিমুিদ্দনের। ছলিমুদ্দিন একজন ভাল বক্তা। যেখানে বক্তৃতা করে ভীর হয় সেখানে। অনেকে ছলিমুদ্দিনের বক্তৃতা শুনতে দুর থেকেও আসে। ছলিমুদ্দিন বক্তৃতা করছে। সবাই তা মনযোগ দিয়ে শুনছে। মাঝে মধ্যে লোকজন সম্মিলিতভাবে হাত তালি দিচ্ছে। কেউ শ্লোগান দিচ্ছে। জনতার এ করতালিতে ছলিমুদ্দিন খুব উৎসাহ পাচ্ছে। তার বক্তৃতার স্পিড আরো বাড়ছে এ সময়।
ছলিমুদ্দিন বলেই চলছে, ভাইয়েরা আমার,আপনারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারেন,আমি আপনাদের জন্য আমার জীবন বাজী রেখে কাজ করব। আমি হব আপনাদের আরেকটা ভাই। আমি থাকতে আপনাদের কোন ক্ষতি কেউ করতে পারবেনা। আমি ঢাল হয়ে আপনাদের রক্ষা করব। আপনাদের অভাগ অভিযোগে সব সময় আমাকে পাশে পাবেন।
মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শুনছে জনতা,সাথে সজিবও। বক্তৃতার বহর দেখে মনটা যেতে চাচ্ছে না সজিবের। না আরেকটু শুনে যাই। হাটের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু বক্তৃতার শেষটুকু না শুনে যাবেনা সজিব। হাস দরকার হলে পরের হাটে কিনবে। কিন্তু পরের হাটেতো আর ছলিমুদ্দিন ভাইয়ের বক্তৃতা শুনতে পাবেনা।
ছলিমুদ্দিন জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলে চলছে, প্রিয় ভাইরা আমার, আর তিনদিন পরে ভোট,আপনারা আমাকে বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন,আমি আপনাদের অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে আমার জীবন দিব। আরো অনেক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে জনতাকে একেবারে মুগ্ধ করেছে ছলিমুদ্দিন। বক্তৃতা শেষে অনেকে বলছে, এমন লোককে আমাদের দরকার। ছলিমুদ্দিন ভাইকে এবার আমরা ভোট দিব।
বক্তৃতা শুনে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে সজিবের। সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। এখন বোধহয় আর হাস পাওয়া যাবেনা। তবুও হাটে যায় সজিব। হাট ফাকা হয়ে গেছে। দুএকজন পাইকার হাস নিয়ে বসে আছে। শেষ সময়ের হাট। দাম একটু বেশী দিয়ে দু’টা হাস নিয়ে বাড়ীতে আসে সজিব।
রাত করে হাস আনায় সজিবের স্ত্রী রহিমা চিল্লা-ফাল্লা করছে। এত রাতে কেউ হাস নিয়ে আসে। আমি এখন এই হাস দিয়ে কি করব। সজিব স্ত্রীকে বলে কালুর মোড়ে ছলিমুদ্দিন ভাইয়ের ভোটের বক্তৃতা শুনতে দেরি হয়ে গেল।
এবার আরো রেগে যায় রহিমা। তোমার কি ভোট আছে। তোমাকে ওই বক্তৃতা শুনতে হবে কেন। ওটাতো পৌর সভা ভোট, তোমার কি?
সজিব স্ত্রীকে বলে ওনেক লোক বক্তৃতা শুনছে, তাই।
অনেক রাত হওয়ার কারনে হাস দু’টা বারান্দায় বেধে রাখে রহিমা। সকালে জবাই করে হাস প্রসেস করবে। তাছাড়া হাস প্রসেস করতে অনেক সময় লাগে। আজ হবে না।
রাতে খাওয়া করে সজিব ছলিমুদ্দিনের কথা ভাবে। পৌরবাসীর এমন লোককে ভোট দেয়া দরকার। গরীব মানুষের উপকার হবে। মানুষের কাজ হবে। পৌর সভার উন্নতি হবে। পরে ঘুমিয়ে পড়ে সজিব।
ভোর রাতে হাসের চেচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় সজিবের। বাইরে এসে দেখে দুটো বিড়াল হাস দু’টো কে আক্রমন করে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে। সজিবকে দেখে পালিয়ে যায়, বেড়াল দু’টো।
বিড়ালের আক্রমনে কিছুক্ষন পর মারা যায় হাস দু’টো। তাছাড়া বাঁচলেও ওই হাস খাওয়া যেতনা। রুচিরও একটা ব্যাপার আছে। রহিমা অবস্থা দেখে সজিবের উপর আরো রেগে যায়। সে সজিবকে বলে এখন যাও তোমার ছলিমুদ্দিনকে বল,তোমাকে হাস কিনে দিতে।
রহিমার কোন কথার জবাব দেয়না সজিব। হাস দু’টো বিড়ালের আক্রমনে মারা যাওয়ায় মনটা খারাপ হয়ে যায় সজিবের।
আজ পৌর সভায় ভোট। সকালের নাস্তা করে সজিব ভোট দেখতে যায়। যা মনে করছিল তাই। লোকজন ভোট দিয়ে ছলিমুদ্দিনের কথা বলছে। ছলিমুদ্দিন মনে হয় জিতবে। ছলিমুদ্দিনের লোকজন সেন্টারে ভাল ক্যানভাসও করছে। মনটা বেশ প্রফুল্য হয় সজিবের। একটা বিজয়ী হাসি নিয়ে বীবের মত বাড়িতে আসে সজিব।
ভোটের ফলাফল দেয়া হয়েছে। সাতজন প্রতিদ্বন্ডীকে হারিয়ে জিতেছে ছলিমুদ্দিন।
ছলিমুদ্দিনের বাড়িতে লোকে লোকারন্য। সবাই এসেছে ছলিমুদ্দিনকে বিজয় মালা পড়াতে।
চেয়ারম্যান ছলিমুদ্দিন ভালোই ছুটাছুটি করছে।
এলাকার বিচার সার্লিশও করছে ছলিমুদ্দিন। অনেকে বলাবলি করছে ছলিমুদ্দিন বিচার সার্লিশে ভুক্তভোগিদের কাছে টাকা নিচ্ছে। কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় সজিবের।
ছ’মাস পর সজিব লোক মুখে জানতে পারে ছলিমুিদ্দন চেয়ারম্যানের বাড়িতে পুলিশ এসেছে। মটরসাইকেলটা নিয়ে সজিব দেখতে যায়, কি ঘটনা। ছলিমুদ্দিনের বাড়ির একটি ঘর থেকে ৬০ বস্তা ত্রানের চাল পাওয়া গেছে। পুলিশ চাল জব্দ করে ছলিমুদ্দিনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।
মনটা খারাপ হয়ে যায় সজিবের। এমন ভাল মানুষ।এত সুন্দর বক্তৃতা। সেই মানুষের এই কাজ। উৎসুক জনতা ভীর করে আছে। সবাই বলছে ছলিমুদ্দিন জনগনের দেয়া ত্রান চুরি করে খায়। এবার ধরা খাইছে। বিষন্ন মনে সজিবের মনে পড়ে,সে দিন তার হাস দু’টোও বিড়ালে খাইছে।









