“মানবতা”
-ফয়েজ আহমেদ।
রাস্তায় একটা জটলা দেখা যাচ্ছে।এগিয়ে যায় সুমন। একটা লোক চিৎ হয়ে পড়ে আছে। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে। একজন বলে,লোকটা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিল। অজ্ঞান পার্টি আবার কি। জানেনা সুমন। সে ওই লোকটিকে জিজ্ঞেস করে,লোকটির কি হয়েছে। লোকটি আবার বলে,অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে এই দশা হয়েছে। বোঝেনা সুমন। এটা আবার কি পার্টিরে বাবা। মানুষকে অজ্ঞান করে দেয়। আরেকটি লোক বলে,অজ্ঞান করে লোকটির টাকা পয়সা,মোবাইল সব নিয়ে গেছে। এবার বুঝতে পারে সুমন। দূস্কৃতিকারীরা লোকটিকে কোন ভাবে অজ্ঞান করে,মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা,লোকটির পরিচয় কেউ জানেনা।
সুমন উপস্থিত লোকজনকে বলে,ভাই আপনারা দাড়ায় না থেকে কেউ লোকটিকে হসপিটালে নিয়ে যান। সুমনের এ কথায় কেউ এগিয়ে এল না। এখন সবাই যার যার মত চলে যাচ্ছে। এখন কি করবে সুমন। সে বাস টারমিনাল বাজারে সওদা কিনতে এসেছে। তাকে তারাতাড়ি ফিরতে হবে। এমনিতে আজ শুক্রবার। নামাযের দিন। তারাতাড়ি ফেরা দরকার। স্ত্রী বাজারের জন্য বসে আছে। এদিকে অজ্ঞাত লোকটিকে ফেলে যেতে পারছেনা সুমন। তার বিবেকে বাধছে। একটা অবচেতন মানুষকে এভাবে রেখে কিছুতেই, যেতে পারবেনা সুমন।
সুমন একটা অটো রিকসা ডাকে। ড্রাইভারসহ লোকটিকে ধরে গাড়ীতে ওঠায় সুমন। এরপর হসপিটালে নিয়ে আসে। হসপিটালের জরুরী বিভাগে রোগীর নাম জিজ্ঞেস করলে,সুমন ঘটনাটি খুলে বলে। পরে সুমনের নাম ঠিকানা লিখে লোকটিকে ভর্তি নেয়া হয়। রোগীর ভর্তির শীটে “পুলিশ কেস” সিল দিয়ে থানায় জানানো হয়। জরুরী বিভাগ থেকে সুমনকে বলা হয়,থানা থেকে পুলিশ না আসা পর্যন্ত সে যেতে পারবেনা।
এ কোন উটকো ঝামেলায় পড়ল সুমন। সে পুলিশী ঝামেলায় পড়বে নাতো। মানুষের উপকার করে, কোন মসিবতে পড়বে নাতে। সুমন শুনেছে,পুলিশ ছাই দিয়েও নাকি দড়ি পাকায়। এখন তাকে যদি কোন ভাবে জড়িয়ে ফেলে। সুমন মনের ভিতরে একটা সাহস তৈরী করে। না এমন কিছু হবেনা। সে তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা,ওই লোকটির উপকার করছে। ঘটনাস্থলের অনেক লোকজন জানে সেটা। ওখানে অনেক দোকানও আছে। দোকানদারদের মধ্যে অনেকে লোকটিকে নিয়ে আসার জন্য জোর করেছে সুমনকে। কোন সমস্যা হলে তারাই স্বাক্ষী দিবে। নির্ভার হয় সুমন।
বেডে নিয়ে আসা হয়েছে অজ্ঞান লোকটিকে। নার্সরা একটা স্যালাইন দিয়ে সুমনের হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়। বলে,আমাদের এখানে যা আছে,আমরা দিচ্ছি। আর এই ঔষধগুলো এখনই আনতে হবে। বিপাকে পড়ে যায় সুমন। মাসের শেষ,যে টাকা আছে,তা দিয়ে গোটা মাস চলতে হবে। এখন ঔষধ আনলে পুরো মাস তার কিভাবে চলবে। চিন্তায় পড়ে যায় সুমন। সুমন একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। মাসে যা পায়,তার একটা অংশ বাড়ীতে বৃদ্ধ বাবা-মা কে পাঠিয়ে,বাকী টাকা দিয়ে কোন ভাবে হিসেব করে মাস চালায় সুমন। এখন সে কি করবে।
নার্স এবার তাগিদ দেয়। কি ব্যাপার এখনও যাননি। ঔষধগুলো তাড়াতাড়ি না আনলে লোকটিকে বাঁচানো যাবেনা। জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার। আর কোন কিছু ভাবেনি সুমন। সে ঔষধের চিরকুট নিয়ে দোকানে যায়। বার’শত টাকার ঔষধ কিনে নার্সের হাতে দেয়। নার্স ঔষধের প্যাকেট খুলে,সেখান থেকে কয়েকটা ইনজেকশন লোকটির শরীরে পুশ করে।
লোকটির পাশে বসে আছে সুমন। সে চিন্তা করছে,কে এই লোকটি। কোথায় বা তার বাড়ী। কি পরিচয়,এই লোকটির। কি জন্য সে সৈয়দপুরে এসেছে। এমন সময় পুলিশ আসে। একজন দারোগা। সাথে একজন সেপাই। দারোগা লোকটিকে ভাল করে দেখে। শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা পরীক্ষা করে। শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। দারোগা বলেন,লোকটিকে কোন কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে।
দারোগা সাহেব এবার সুমন কে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছিল। সুমন জানায়,কি হয়েছিল জানিনা। তারপর সে দারোগাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। দরোগা সুমনের নাম ঠিকানা সব লিখে নিয়ে লোকটির জ্ঞান ফিরলে আমাকে জানাবেন বলে চলে যায়।
লোকটির স্যালাইন চলছে। ডাক্তার সাহেব জানিয়েছেন,জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে। পাওয়ার ফুল “অজ্ঞানের ঔষধ”লোকটিকে খাওয়ানো হয়েছে। কাল সকাল নাগাদ জ্ঞান ফিরে আসবে। নার্স আরো কিছু ঔষধ আনার জন্য সুমনের হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়। সুমন আবারো দোকানে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসে। ঔষধগুলো নার্সের হাতে দিয়ে সুমন বলে,আমি একটু বাসায় যাচ্ছি। আপনারা খেয়াল রাখবেন। আমি সন্ধ্যায় আবার আসব।
হসপিটাল থেকে আসার সময় সামান্য কিছু বাজার করে সুমন। এর পর বাড়ীতে আসে। সুমনের এত দেরী দেখে,খেপে আছে স্ত্রী ফারজানা। সুমন বাড়ী ঢোকার সাথে সাথে,স্ত্রী ফারজানা বলে,শহরে কি তোমার আরও একটা বউ আছে। সেখানে গিয়ে এই বউয়ের কথা ভুলে গেছ। স্ত্রী ফারজানা কে,সব খুলে বলে সুমন। একজন মানুষের জীবন-মরনের প্রশ্ন। তাই আর কিছু বলেনি,স্ত্রী ফারহানা।
দুপুরে একটু দেরী করে খেতে হয়,সুমন আর তার স্ত্রীকে। খাওয়া শেষে একটু শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দেয় সুমন। তার শরীর ও মনের উপর আজ একটা ধকল গেছে। সুমন ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঘুমাতে পারেনা। তার শুধু মনে হয়,লোকটি বাঁচবেতো। চিন্তা করতে করতে সুমনের ক্লান্ত শরীরটা কখন ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে,বুঝেনা সুমন।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে। স্ত্রী ফারজানার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে সুমনের। হাত-মুখ ধুয়ে তারাতাড়ি তৈরী হয় সুমন। তাকে হসপিটালে যেতে হবে। জীবন-মরন সন্ধিক্ষনে হসপিটালে চিকিৎসাধীন অজ্ঞাত লোকটির খবর নিতে হবে তাকে। সুমনকে তৈরী হতে দেখে স্ত্রী ফারজানা জিজ্ঞেস করে,কোথায় যাবে। সুমন উত্তর দেয়,হসপিটালে ওই লোকটাকে দেখতে যাবো। স্ত্রী ফারজানা বলে,আমিও যাব,লোকটিকে দেখতে। সুমনের স্ত্রী ফারজানা মানবিকতায় ভরপুর একটা মেয়ে। সে মানুষকে খাওয়াতে ও দান-খয়রাত করতে ভালবাসে। সুমন লক্ষ্য করেছে,বাড়ীতে গরীব-মিসকিন আসলে ফেরায় না ফারজানা। সাধ্যমত সহযোগীতা করে।
সুমন ও তার স্ত্রী ফারজানা হসপিটালে অজ্ঞাত অজ্ঞান লোকটির পাশে দাড়িয়ে আছে। লোকটির জ্ঞান ফিরেনি। তবে শরীর নাড়াচড়া করছে। সুমন নার্সকে ডেকে,শারিরিক অবস্থার খবর নেয়। নার্স জানায়,কাল সকাল নাগাদ উনি সব কথা বলতে পারবেন। নার্স আরো কিছু ঔষধ আনার জন্য সুমনকে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়। সুমন স্ত্রী ফারজানা কে লোকটির পাশে রেখে দোকানে গিয়ে ঔষধ নিয়ে আসে। সুমন ঔষধের প্যাকেট নার্সের হাতে দিয়ে,আরও কিছুক্ষন অপেক্ষা করে স্ত্রীসহ বাড়ী ফিরে আসে।
সুমন অনেকটা নির্ভার হয়ে রাতের খাওয়া শেষে ঘুমোতে যায়। তার কাছে এখন মনে হচ্ছে,লোকটি বেঁচে যাবে। তাছাড়া সে দেখে এসেছে,লোকটি শরীর নাড়াচড়া করছে। একটা অজ্ঞাত,অসুস্থ্য মানুষের জীবন-মরন সন্ধিক্ষনে পাশে থাকতে পেরে,সেবা করার সুযোগ পেয়ে সুমন নিজেকে তৃপ্ত মনে করে। আজ সে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। সত্যি সত্যি শোয়ার সাথেই ঘুমিয়ে পড়ে সুমন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সুমন। এরপর অফিসে যায়। অফিসে হাজিরা দিয়ে,বসের কাছে আজকের দিনটা ছুটি চায়। বস ছুটির কারন জানতে চাইলে,কালকের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে সুমন। মানবিক কারন,বিধায় বস ছুটি মন্জুর করে।
সুমন অফিস হতে সরাসরি হসপিটালে আসে। আসার সময় সে অজ্ঞাত ওই লোকটির জন্য কিছু ফলমুল কিনে নেয়। কিন্তু একি। লোকটিতো বেডে নাই। গেল কোথায়। সুমন নার্সকে ডেকে ওই লোকটির কথা জিজ্ঞেস করে। নার্স সুমনকে জানায়,লোকটির সকালে জ্ঞান ফিরেছে। সে সম্পুর্ন সুস্থ্য। হসপিটালের বন্ডে সই করে,স্বেচ্ছায় বাড়ী চলে গেছে।
নার্স আরো জানায়,লোকটি হসপিটাল থেকে যাওয়ার সময়,কে তাকে হসপিটালে এনেছে,তার ডিটেলস জানতে চেয়েছিল। আমরা আপনার ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার তাকে দিয়েছি। লোকটি হসপিটালের ফোন দিয়ে,থানায়ও কথা বলেছে,বলে জানায় নার্সটি। আশ্চর্য হয় সুমন। লোকটি থানায় ফোন দিল,অথচ তাকে একটা ফোন দিলনা। নার্সতো বলছে,তারা সুমনের নাম্বার দিয়েছে। কি জানি বাবা,কেমন লোক। থাক,সে এ নিয়ে আর চিন্তা করবেনা। লোকটাতো ভালো হয়েছে। সুস্থ্য হয়ে তার পরিবারের কাছে ফিরে গেছে।
সুমন হসপিটাল থেকে সোজা বাড়ীতে আসে। স্ত্রী ফারজানার হাতে ফলমুলের ব্যাগটা দিয়ে বলে ওই লোকটার জন্য কিনেছিলাম। আমি হসপিটালে যাওয়ার আগে সে বাড়ী চলে গেছে।স্ত্রী ফারজানা লোকটির ভালো হয়ে বাড়ী চলে যাওয়ার খবরে খুব খুশী হয়। সুমন দুপুরের খাওয়া সেরে, কোন কাজ না থাকায় ঘুমিয়ে পড়ে।
রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা অজ্ঞাত লোকটির চলে যাওয়ার আজ চাঁর দিন হলো।লোকটি আজও একটিবারের জন্য ফোন করেনি সুমনকে। সুমন অফিস থেকে বাড়ী এসে খাওয়া করে বিছানায় শুয়ে আছে। আর ওই লোকটির কথা ভাবছে। এমন সময় কলিং বেলটা বেজে ওঠে। স্ত্রী ফারজানা রান্না ঘর থেকে চিৎকার করে বলে,আমি কাজ করছি তুমি দেখতো কে এলো। সুমন বিছানা থকে উঠে গিয়ে গেট খুলে দেয়।
পোষ্ট অফিসের পিয়ন। পিয়ন বলে, আপনার নাম সুমন। আপনার বাবার নাম কি রিয়াজ উদ্দীন। সুমন বলে হ্যা। আপনার মোবাইলটা নিয়ে আসুন। সুমন তার হাতে থাকা মোবাইলটা দেখায়। পোষ্ট পিয়ন কাগজে থাকা নাম্বার তুলে রিং দেয়। বেজে ওঠে সুমনের ফোন। পোষ্ট পিয়ন এবার বলে, আপনি ফোনটা রিসিভ করুন। সুমন ফোনটা রিসিভ করে। এবার পোষ্ট পিয়ন একটা কাগজে সুমনের স্বাক্ষর নিয়ে “পঞ্চাস হাজার” টাকার একটি বান্ডিল সুমনের হাতে ধরিয়ে দেয়। সুমন জিজ্ঞাসা করে কে পাঠিয়েছে, এই টাকা। ওটা আপনার নামে ঢাকা থেকে এসেছে,বলে চলে যায় পিয়ন।
সুমন ঘরে এসে টাকাটা তার স্ত্রীর হাতে দিয়ে বলে,পোষ্ট অফিস থেকে দিয়ে গেল। আমার নামে মানি অর্ডার। ঢাকা থেকে এসেছে। কিন্তু কে পাঠালো,বলো তো। সুমন আর তার স্ত্রী কে পাঠিয়েছে,এই টাকা বুঝতে পারেনা। সুমনের হাত একেবারে খালী। যা টাকা ছিল,অজ্ঞাত ওই লোকটির চিকিৎসায়,সে খরচ করে ফেলেছে। কিন্তু তার পরেও এই টাকা সে কিভাবে খরচ করবে। জানেনা,চিনেনা এমন মানুষ কেন তাকে টাকা পাঠাবে।
সুমন টাকার ব্যাপারটা চিন্তা করছে। এমন সময় তার ফোনটা আবার বেজে ওঠে। ওপাশ থেকে একজন ব্যাক্তি বলেন,আপনি সুমন সাহেব বলছেন। জ্বি বলে, জবাব দেয় সুমন। লোকটি এবার বলে,আপনি আমাকে চিনবেন না। পরিচয় দিলে হয়ত বুঝবেন। যাক সে কথা। আগে বলেন, আপনি পঞ্চাস হাজার টাকা পেয়েছেন। সুমন বলে হ্যা একটু আগে পোষ্ট অফিস থেকে দিয়ে গেছে। লোকটি বলে টাকাটা আমি আপনাকে পাঠিয়েছি। সুমন এবার বলে আপনি আমার কাছে টাকা পাঠালেন কেন। আমি তো আপনাকে চিনিনা। এবার লোকটি বলে,ওই যে বললাম,পরিচয় দিলে বুঝতে পারবেন।
লোকটি তখন বলে,আমার নাম মাহমুদ হাসান। আমি সচিবালয়ে চাকুরী করি। বলতে পারেন,ছোট খাট একজন সচিব। আপনি সে দিন,রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে, যাকে হসপিটালে ভর্তি করে চিকিৎসা করেছেন,সেবা করেছেন,আমি সেই লোক। আপনার স্ত্রীও হসপিটালে আমাকে দেখতে এসেছিল। আমি আপনাদের কাছে,চির কৃতজ্ঞ।
লোকটি সুমনকে আরও বলে,আপনি জানেন,আমি একটি মাইক্রো ভারা নিয়ে বগুড়া থেকে আমার বাড়ীতে যাচ্ছিলাম। পথে মাইক্রো ড্রাইভার আমাকে কৌশলে অজ্ঞান করে,ওখানে ফেলে দেয়। আমার টাকা,মানি ব্যাগ,গহনা সব নিয়ে গেছে। পরশু আমার বিয়ের দিন ছিল। আপনি আমাকে হসপিটালে না নিয়ে গেলে,আমার কি হত। আপনি আমার কি উপকার করেছেন,তা বলতে পারব না। আমি আপনার কথা আমার নব বিবাহিতা স্ত্রীকে বলেছি। সে আপনাকে দেখতে চেয়েছে।
সুমন এবার বলে,তাহলে কি সেই কৃতজ্ঞতার মুল্য টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। আমি আপনার টাকা নিতে পারবনা। ওটা আপনাকে ফেরত নিতে হবে। এবার লোকটি বলে,আপনি বিষয়টা ওভাবে নেবেন না। আমি আপনার ব্যাপারে সব খবর নিয়েছি। আপনি একটা ছোট খাট চাকরী করেন। সেখান থেকে আপনি আমার জন্য চিকিৎসা বাবদ খরচ করেছেন। আপনার খরচের টাকা ফেরত দিলাম আর কি।
সুমন লোকটিকে বলে,আমিতো ওত টাকা খরচ করিনাই। বড়জোর হাজার পাঁচেক হবে,খরচ করেছি। তাহলে আপনি অত বেশী টাকা পাঠালেন কেন। আর পাঠানোর আগে আমাকে ফোন দিলেন না কেন। লোকটি এবার সুমনকে বলে আমি হসপিটাল থেকে জেনেছি আপনার কত খরচ হতে পারে। বাকীটা মনে করবেন,আপনার জন্য আমার পক্ষে উপহার।
আর টাকার কথা কেন বলছেন,আপনার উচিঁলায় আমি বেঁচে গেছি। আপনার ঋন আমি বেঁচে থাকতে শোধ করতে পারবনা। আমি যত দিন বাঁচব,আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব। দয়া করে আমার এ টাকাটা,আপনি ফেরত দেয়ার কথা আর বলবেন না। আর হ্যা,আগামী ছুটিতে আমি বাড়ী আসব। তখন আপনার বাসায় আমার স্ত্রী সহ বেড়িয়ে আসব। সাক্ষাতে কথা হবে বলে, ছালাম দিয়ে লোকটি ফোনের লাইনটি কেটে দেয়।
সুমন লোকটির কৃতজ্ঞতায় অভিভুত হয়ে পড়ে। এত বড় মাপের একজন লোক তাকে ফোন দিয়ে চিরকৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। ভাবতে তার হদয় শিহরিত হয়ে ওঠে। পুলকিত হয় সে। তার মন আনন্দে নেচে ওঠে। সে ভাবে আসলে সমাজে এখনও অনেক ভাল লোক আছে। যাদের জন্যই হয়ত,পৃথিবীটা আজও টিকে আছে। মনিষীদের এই কথা তার কাছে চিরন্তন সত্য,বলে প্রতিষ্ঠিত হয়।
Related Posts

ভালবেসে নাজমীনকে বিয়ে করেছিল তুহিন। ক'দিন আগে নাজমীন আর তুহিনের বিয়ের দশ বছর পুর্ণ হয়েছে। জাকজমক ভাবে বিয়ের দশ বছর পূর্তি করেছেন তারা। সংসার জীবনে তাদের কোন অর্পূন্নতা নেই। শুধু ...
READ MORE
"কর রহমত"
-ফয়েজ আহমেদ।
বছর শেষে,এলো রোজা
রহমত পর্বের,চলছে পালা,
বাকী আর,একটা রোজা
সময় আছে,ধরো রোজা।
আজকে হবে,দশটা রোজা
রহমত পর্বের,শেষ রোজা,
আয় তোরা, খাই সেহরী
রহমত পেতে,রোজা রাখি।
বাকী রবে, বিশটা রোজা
মাগফেরাত পর্ব,পরের দশটা,
আল্লার দয়া, পেতে হলে
মাগফেরাত রোজা,করতে হবে।
মাগফেরাত ...
READ MORE
যুদ্ধ চাই"
-ফয়েজ আহমেদ
যুদ্ধ চাই,ভৌগলিক রেখার নয়
স্বাধীনতা চাই,সেই পতাকার নয়,
সংগ্রাম চাই,রুখতে,অশুভ ব্যাধি
আরেকটি যুদ্ধ চাই,করতে শুদ্ধির।
যুদ্ধ চাই আনতে,শুভ রাজনীতি
অফিস-আদালত হবে,মুক্ত র্দূনীতি,
সামাজিক স্তরে চাই,প্রকৃত সেবা
যুদ্ধ চাই মোরা,সুশাসন প্রতিষ্ঠার।
যুদ্ধ চাই,আনতে মানবতার সুদিন
গাইবে সবাই,মানবিক গান ...
READ MORE
গ্রামে গঞ্জে ভিক্ষা করেন ছকিনা বেওয়া। বয়স তার ষাট পেরিয়েছে অনেক আগেই। স্বামীও মারা যাওয়ার প্রায় পনের বছর। হয়নি কোন বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা।দুই ছেলের সংসারে বউদের নাকানি-চুবানি খেয়েও ভালই ...
READ MORE
"নেতা"
-ফয়েজ আহমেদ
নেতা,তুমি করনি সেবা,করেছ অবহেলা
আদর্শচূত হয়েছ তুমি,পালন করনি ওয়াদা,
নীতি ভেঙ্গেছ তুমি,নৈতিকতা দিছ বলি
জনতাকে দিছ ধোকা,শপথ ভেঙ্গে তুমি।
নেতা,পাশে রবে বলে,দুরে কেন আছ
তোমার দেয়া অঙ্গীকার,ভুলে কেন গেছ,
আশার বানী অনেক দিছ,ভুলে তা কি ...
READ MORE
তেল হাওয়া"
(একটি ছোট রম্য রচনা)
মিলে সরিষা তেল নাই কথাটা শুনে একটা হোচট খায় সজিব। সে ভাবে করোনা প্রর্দুভাবের কারনে মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। হাট-বাজারে মানুষ কম আসছে। এখনতো সব ধরনের ...
READ MORE
"চুলকানী"।
-ফয়েজ আহমেদ।
দলের নিকট বারবার ধর্না দিয়েও নমিনেশন পেলেন না কামরুল সাহেব। মোটা অংকের টাকাও দিয়েছেন,তবুও গলাতে পারেননি মন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কোনভাবেই কামরুল সাহেবকে নমিনেশন আর দিলেন না। দীর্ঘ দিনের পরিক্ষীত,কর্মী ...
READ MORE
ভীটে মাটি নেই নন্দ লালের। অন্য মানুষের পুকুর পাড়ের এক কোনে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করেন নন্দ। স্ত্রী ও তিন কন্যাকে নিয়ে গাদাগাদি করে অস্থাস্থ্যকর এক জীবন পার করছে সে। গত ...
READ MORE
মাথা ভর্ত্তি একরাশ চিন্তা নিয়ে শহরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় রফিক। বাড়িতে কোন টাকা নেই। বাজার যা আছে দু'এক দিনে শেষ হয়ে যাবে। এদিকে এখন তার পকেটে আছে মাত্র পঞ্চাস টাকা। ...
READ MORE
"দ্বি-চারিনী"
ফয়েজ আহমেদ।
রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় একটি পরিচিত নারী কন্ঠ ভেসে আসে সাকিলের কানে। কন্ঠটা রাস্তার পাশের ওই বাড়ীটা থেকে আসছে। বাড়ীটা সাকিলের পরিচিত। আব্দুল হকের বাড়ী। সাকিলের এক কাছের ...
READ MORE