নীলফামারীর সৈয়দপুরে সড়ক দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানসহ ৯জনকে আসামী করা হয়েছে।
এ মামলাটি দায়ের করেছেন সড়ক দূর্ঘটনায় জনতার হাতে ধৃত মাইক্রো ড্রাইভার গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার রেজাউল হক।
অপর মামলাটি করেছেন,সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত রংপুর মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চিকিসাধীন ফজলুর পিতা কামারপুকুর ইউনিয়নের চিকলী আলোদ্দি পাড়ার আঃ সাত্তার। এ মামলাটিতে আসামী করা হয়েছে,গাজীপুর কাপাসিয়ার মাইক্রো ড্রাইভার রেজাউল হক(৩২)কে।
মাইক্রো চালক রেজাউলক হক গাড়ীটি নিয়ে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জে যাওয়ার পথে কামার পুকুর বাজারে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
মামলা দু’টি শনিবার বিকেলে ও রাতে সৈয়দপুর থানায় রেকর্ড করা হয়।
মামলা সুত্রে জানা যায়,সৈয়দপুরের কামারপুকুর বাজারে গত ৭ মে কাপাসিয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হক বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে সাইকেল আরোহী মো. ফজলু মিয়াকে স্বজোরে ধাক্কা মারে। এতে মারাত্মক ভাবে আহত হয় সাইকেল চালক ফজলু(৪০)। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়।
স্থানীয় লোকজন ঘাতক মাইকোবাসসহ চালক রেজাউল হককে আটক করে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করে। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান লোকমান পরিষদে উপস্থিত ছিলনা।
স্থানীয় লোকজন একটি অটোরিক্সায় আহত ফজলুসহ ঘাতক মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হককে সাথে নিয়ে সৈয়দপুর ১০০শয্যা হাসপাতালে যান। সেখানে আহত ফজলুর অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হসপিটালে রেফার্ড করা হয়। ঘাতক মাইক্রো বাসের চালক ও আহত ফজলুর পরিবারের সদস্যরা আহত ফজলুকে এ্যামবুলেন্স যোগে রংপুর মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি করেন।
পরে ওই দিন বিকেলে ঘাতক মাইক্রো বাসের চালক রেজাউল হককে কামার পুকুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন এজাহারভুক্ত আসামী মনসুর আলী। কিন্তু চেয়ারম্যান পরিষদে না থাকায় ওই চালক রেজাউল হককে আসামী ফিরোজের বাড়ীতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
গত ৮মে আসামী ফিরোজ ওই চালককে কামার পুকুর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। সেখানে দুপুর ১২ ঘটিকার দিকে চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমানের নেতৃত্বে আপোষ-মিমংসা আলোচনা চলা কালে আসামী ভরসা ও আহত ফজলুর পরিবারের সদস্যরা ঘাতক ওই মাইক্রো চালক রেজাউল হকের নিকট এক লক্ষ টাকা চাঁদা চান, বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে মারাত্মক ভাবে আহত রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ফজলুর পিতা ঘাতক মাইক্রো বাসের চালক রেজাউল হক(৩২)কে আসামী করে অপর মামলাটি দায়ের করেছেন।
পুলিশ মাইক্রোবাস চালক রেজাউল হকের দায়ের করা মামলায় এজাহার নামীয় আসামী চৌকিদার জাহাঙ্গীর ও জহিরকে আটক করেছে। ঘাতক মাইক্রোবাসের চালক এজাহার করে চলে যাওয়ায় এবং তার পরে এজাহার দায়ের করায় চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এ ব্যাপারে কামার পুকুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান বলেন,দূর্টনাটির ব্যাপারে আমার জানা ছিলনা। কে বা কারা মাইক্রোবাসটি রেখে গিয়েছে তাও জানি না। ৮মে চালক রেজাউল হকসহ আহত ফজলুর পরিবারের লোকজন পরিষদে আসলে আমি ঘটনা বিষয়ে অবগত হই। এবং পরে আমি উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ-মিমংসা করার চেষ্টা করি। দূর্ঘটনায় আহত ফজলুর পরিবার গরীব বিধায় চালককে চিকিৎসা বাবদ পশ্চিশ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। চালক তার লোক টাকা নিয়ে আসছে বলে,স্বেচ্ছায় আহতদের পরিবারের জিম্মায় তাদের বাড়ীতে ছিল।ওই চালককে ইউনিয়ন পরিষদে আটক করে রাখা হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আরও বলেন,এক লক্ষ টাকা চাঁদা চাওয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা। তিনি বিষয়টি তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ আবুল হাসনাত খান দু’টি মামলা রেকর্ড হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তভাষা’কে বলেন,তদন্ত চলছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঘাতক মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, একই ইউনিয়নরে আলোকদি পাড়ার নুরে আলম সিদ্দিক ওরফে ভরসা (৩৫), ইউপি সদস্য আনছারুল (৪৩), ইউপি সদস্য রাজিউল ইসলাম রাজু (৩৮), কলাবাগানের মনছুর আলী (৫৫), রিফুজি পাড়ার ফিরোজুল ইসলাম ফিরোজ (৩৪), সাইফুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল জানান, অবৈধভাবে কাউকে আটকানোর এখতিয়ার কারো নাই। ঘটনা তদন্ত চলছে এবং মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন,ঘাতক মাইক্রোবাসের চালক এজাহার করে চলে যাওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে এজাহার হওয়ায়,ওই চালককে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে, তিনি জানান।
স্থানীয় কামার পুকুর বাজারের লোকজনের দাবী,ঘটনাটি চাঁদাবাজীর নয়।আহত ফজলুর চিকিৎসার জন্য উভয় পক্ষের দরকষাকষির জের। তারা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
স্থানীয় সচেতন মহল বলেন,গনপরিবহন বন্ধের সরকারী সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ওই চালক বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে দিনমজুর ফজলুকে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে। তারা দিন মজুর গরীব ফজলুর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।









