“মেয়টাকে ভাল রেখ”
-ফয়েজ আহমেদ।
রাত দু’টো বাজে। হাইওয়ে ডিউটি চলছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠল। এত রাতে কে ফোন করছে। আরিফ পকেট থেকে ফোনটা বের করে। বাড়ী থেকে ফোন। স্ত্রী মাজেদা করেছে।এত রাতে স্ত্রীর ফোন পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে আরিফ। তার মনে অজানা এক আশংকা বিরাজ করে।
আজ প্রায় দেড়’বছর বাড়িতে যায়নি আরিফ।কর্মস্থলেই আছে। নিয়মিত ডিউটি করতে হয়। অনেক সময় চব্বিশ ঘন্টাও তাকে ডিউটি করতে হয়েছে। অনেকবার ছুটি নেওয়ার চেষ্টা করেছে আরিফ। কিন্তু হয়নি। যখনই ছুটিতে যেতে চেয়েছে ,তখনি কোন না কোন জাতীয় সমস্যার কারনে ছুটি বাতিল হয়েছে।
বাচ্চাটার বয়স যখন ন’মাস তখন শেষ বার ছুটিতে গিয়েছিল আরিফ। পনের দিন পরিবারের সাথে কাটিয়ে এসেছে। তার বাচ্চাটি ন’মাসে বেশ নাদুস-নুদুষ হয়েছে। আরিফের কোল থেকে অন্য কারো কোলে যেতে চাইত না। এমনকি ওর মায়ের হাতও সড়িয়ে দিত। আরিফের কোলে হাসত-খেলত।
আরিফ চিন্তা করে মেয়েটার কিছু হয়নি তো। নাকি বাবা-মায়ের কোন সমস্যা হলো। কিছু বুঝতে পারেনা আরিফ।ফোনটা রিসিভ করে। স্ত্রী মাজেদার কন্ঠ ভেসে আসে। আরিফ স্ত্রী মাজেদাকে বলে কি ঘটনা,এত রাতে ফোন করছ কেন। কোন সমস্যা হয়নি তো। আরিফের স্ত্রী মাজেদা অভয় দেয়। না কোন সমস্যা হয়নি।
মাজেদা বলে, আমিনা ঘুমাচ্ছে না। ও বার বার বলছে আব্বুর সাথে কথা বলব। আরো বলছে,আব্বুর সাথে কথা না বলে ঘুমাবে না। আমি অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু কিছুতেই মানছে না। তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে ফোন দিলাম। তুমি এবার তোমার মেয়ে কে বুঝাও। আরিফের মন থেকে এবার অজানা আশংকাটা কেটে যায়।
আরিফ চিন্তায় পড়ে যায়। মেয়েটা কথা বলা শেখার পড় অনেক বার বলেছে,আব্বু তুমি বাড়ীতে আস। আমি তোমাকে দেখব। অনেক বার যাওয়ার সময় দিয়েও যেতে পারেনি আরিফ। মেয়েটা তাকে কয়েক বার বলেছে আব্বু তুমি মিথ্যা কথা বল। আসতে চেয়ে আসনা। আরিফ তখন বলেছে, মারে এবার ঈদে আমি ঠিক আসব। আর আসার সময় তোমার জন্য জামা-কাপড় আর জুতো কিনে নিয়ে আসব। মেয়েটা ওই কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিল।
পড়ে আরেক দিন ফোন করে মেয়েটা আরিফ কে বলেছে,আব্বু এবার ঈদে কিন্তু তোমাকে আসতেই হবে । আরো বলেছে,আমি তোমাকে দেখব আব্বু। এবার ঈদে যদি না আস,তাহলে তোমার সাথে আর কোন দিন কথাই বলব না।
মেয়েটির এমন কথায় খুব কেঁদেছিল আরিফ। নিজের মেয়েকে সে দেখতে যেতে পারছে না। সে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি। তার মধ্যে একটা বিবেকের দংশন হচ্ছিল। কিন্তু কি করবে আরিফ। সে তো পুলিশে চাকুরী করে। মানুষের জান মালের নিরাপত্তার দায়িত্বে সে নিয়োজিত। ইচ্ছে করলেই সে যেতে পারে না। তাছাড়া বর্তমানে দেশে বৈশিক করোনা ভাইরাস মহামারী হানা দিয়েছে। এখন পুলিশের অনেক কাজ। এই মহুর্তে সে কোন ভাবেই ছুটিতে যেতে পারবে না।
আরিফ স্ত্রী মাজেদা কে বলে,ফোনটা মামনিকে দাও। ওপাশ থেকে আরিফের কন্যা আমিনা ছালাম দিয়ে বলে, আব্বু কেমন আছ। আরিফ বলে হ্যা মামনি ভাল আছি।আরিফের স্ত্রী মেয়েটাকে খুব ভাল শিক্ষা দিয়েছে। ফোন করলে আগে ছালাম দিয়ে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করবে। তার পরে অন্য কথা বলবে। স্ত্রী মাজেদার প্রতি আরিফ তাই খুব কৃতজ্ঞ।
আরিফ ভাবে সে পাশে না থাকলেও মাজেদা মেয়েটাকে খুব ভাল ভাবে মানুষ করছে। আরিফ মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে,আম্মু তুমি ভাল আছ। জ্বি আব্বু আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভাল আছি। মেয়েটা এবার বলে আব্বু ঈদের তো আর তিন দিন বাকী। তুমি কোন দিন আসবে। আর আমার জামা-কাপড় জুতো কিনেছ। মেয়েটার এ কথার কোন জবাব দিতে পারেনা আরিফ। সে ভাবে কি ভাবে মেয়েকে বলবে, এবারও সে আসতে পারবে না। মেয়েটার জন্য সে জামা-কাপড়, জুতো কিনতে পারেনি।
আরিফ চুপ করে থাকে। তার ভিতর থেকে একটা বোবা কান্না বেরিয়ে আসতে চায়।কাল আরিফের করোনা টেষ্ট করা হবে। ক’দিন থেকে শরীরটা ভাল যাচ্ছে না আরিফের। সে জানে না করোনা টেষ্টের ফলাফল কি হবে। পজিটিব হবে কিনা। আর যদি করোনা পজিটিব হয়। শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে সে দেখতে পারবে তো।
আরিফ ফোন হাতে নিয়ে, মনে মনে বলে, মারে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি তোর জামা-কাপর আর জুতো নিয়ে আসতে পারব না। মেয়েটি আবার জিগায়,আব্বু কথা বলছ না কেন। এবার আরিফ বলে,মারে নেটওয়ার্কের সমস্যা। কথা ভাল ভাবে শোনা যাচ্ছে না। তুমি ফোনটা রাখ আর ঘুমিয়ে পড়। আমি তোমাকে কাল ফোন দিব।
আরিফ এবার ফোনের লাইনটা কেটে দেয়। বুক ডুকরে তার কান্না আসে। সে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। তার মনের অজান্তেই করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চোঁখের সামনে ভেসে ওঠে। সে ভাবে এই করোনা ভাইরাসের কারনে গোটা পুথিবীর মানুষ আজ অসহায়। বিশ্বের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বেশী ইতি মধ্যে মারা গেছে। বিশ্বের অর্ধ কোটি মানুষ আজ আক্রান্ত। প্রতিদিন মৃত্যু আর সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ছেই।
আরিফ আরও ভাবে, তার দেশেও আজ করোনা আঘাতে অত্যান্ত নাজুক অবস্থা। ইতিমধ্যে অনেক লোক মারা গেছে। আক্রান্ত প্রায় বিশ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিদিন মৃত্যু আর সংক্রমনের হার বাড়ছেই। তার ডিপার্টমেন্টেরও অনেকে ইতিমধ্যে মারা গেছে। অনেক পুলিশ সদস্য করোনা পজিটিব। তারা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
আরিফ আরও ভাবে,তার মতো অনেকে আজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।জনস্বার্থে আর মানবিকতায় তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে করোনা সংকটে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে । আরিফ তাদের সবার জন্য মন থেকে দোয়া করে। আল্লাহ’র কাছে ফরিয়াদ করে, হে আল্লাহ, তুমি এই করোনা ভাইরাস গজব থেকে বিশ্ব বাসীকে মুক্তি দাও। সবাইকে আপন জনদের সাথে আবার মিলিয়ে দাও প্রভু। সে মহান আল্লাহ’র কাছে আরও মিনতি করে, হে আল্লাহ আমার যাই হোক, তুমি আমার মেয়েটাকে ভাল রেখ।
Related Posts

"করোনা"
-ফয়েজ আহমেদ
করোনা,তুমিতো ভালা না
দুরত্ব এনেছ সমাজ পরিবারে
মায়ের সন্তান নিয়েছ কেড়ে
স্ত্রী করেছ পর স্বামীর কাছে
পিতাও অসহায় তোমার দ্বায়ে।
করোনা,তুমিতো ভালা না
বিশ্ব কাবু,এও তোমার যাদু
বিশ্ব অর্থনীতি ভেঙ্গেছ তুমি
বিশ্ব নেতাদের করেছ কাবু
তুমি কি যাবে ...
READ MORE
"দ্বি-চারিনী"
ফয়েজ আহমেদ।
রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় একটি পরিচিত নারী কন্ঠ ভেসে আসে সাকিলের কানে। কন্ঠটা রাস্তার পাশের ওই বাড়ীটা থেকে আসছে। বাড়ীটা সাকিলের পরিচিত। আব্দুল হকের বাড়ী। সাকিলের এক কাছের ...
READ MORE
"আমি বাঙ্গালী"
-ফয়েজ আহমেদ
আমি বাঙ্গালী,বীর আমি,মহাবীর
দুঃসাহসী নির্ভীক,মৃত্যুন্জয় আমি,
ভয়,সেটা আবার কি?জানা নেইতো
আমি বঙ্গবন্বুর জ্বালাময়ী ভাষন,কবিতা।
৭মার্চের ঐতিহাসিক ডাক,নির্ভয়তা আমি
আষাঢ়ের বজ্রপাত,আমি কঠিন বজ্রশক্তি,
দুচোঁখে যুদ্ধের নেশা,আমি স্বাধীনতাকামী
বিজয় ছিনিয়ে নেয়া, রক্তিম হতিহাস আমি।
মনে নেই একাত্তর,আমি তার ...
READ MORE
মাথা ভর্ত্তি একরাশ চিন্তা নিয়ে শহরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় রফিক। বাড়িতে কোন টাকা নেই। বাজার যা আছে দু'এক দিনে শেষ হয়ে যাবে। এদিকে এখন তার পকেটে আছে মাত্র পঞ্চাস টাকা। ...
READ MORE
"রোজা"
-ফয়েজ আহমেদ
নীল আকাশে উঠল ভেসে
মহাখুশির চাঁদ,মুমিন সকল
খাসদিলে,করবে রোজা কাল।
খাবে সেহরী,রাখবে রোজা
এইতো সবার,মনের আশা
পুর্ন হবে,সকল অভিলাশ।
নীল আকাশের,সোনালী চাঁদ
সবার মাঝে,আনন্দ-উচ্ছ্বাস
এলো খুশির,মাহে রমজান।
নীল আকাশের,বাঁকা চাঁদে
সকল মুমিন,স্বপ্ন খোজে
মাবুদ দিবে,এবার নিস্তার।
মাস ব্যাপি,রাখবে রোজা
পড়বে নামায,করবে দোয়া
সকল ...
READ MORE
"পক্ষ"
-ফয়েজ আহমেদ
ঘটনাস্হল খাতামধুপুর,রাজনীতি সৈয়দপুরে
এমনভাবে চলতে থাকলে,ক্ষতি সবার হবে,
দুইটা পক্ষ দুই দিকে,রাজনীতি করছে জানি
স্বচ্ছ রাজনীতি চাই মোরা,নয় অপরাজনীতি।
দড়ি ধরে টানাটানি,করছে দুই প্রভাবশালী
সত্য মিথ্যার চলছে লড়াই,জানি সবাই জানি,
দোষী কিনা যাছাই করা,নয়তো কারো ...
READ MORE
"চুলকানী"।
-ফয়েজ আহমেদ।
দলের নিকট বারবার ধর্না দিয়েও নমিনেশন পেলেন না কামরুল সাহেব। মোটা অংকের টাকাও দিয়েছেন,তবুও গলাতে পারেননি মন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কোনভাবেই কামরুল সাহেবকে নমিনেশন আর দিলেন না। দীর্ঘ দিনের পরিক্ষীত,কর্মী ...
READ MORE
"হাঁস বিড়ালে খাইছে"
- ফয়েজ আহমেদ।
(বর্তমান প্রেক্ষাপটের একটি ছোট গল্প)
সেদিন ছিল সোমবার। ফকিরের হাট। সজিব হাটে গিয়ে হাস কিনবে। হাসের মাংস খুব প্রিয় সজিবের। বাজারের ব্যাগ নিয়ে মটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে হাটের ...
READ MORE
তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান বক্তার ওয়াজ-নসিহত শুনে ফরিদের মনটা খারাপ হয়ে যায়। অনেক আশা নিয়ে দশ কিলো পাড়ি দিয়ে মাহফিলে এসেছিল ফরিদ। কিন্তু এ কেমন বক্তৃতা করলেন হুজুর। ইসলামী জীবন ...
READ MORE
গেল এক সপ্তাহ রিকসা নিয়ে বাইরে যেতে পারেননি সেকেন্দার।দেশে চলছে সরকার ঘোষিত লকডাউন। মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমন ঠেকাতে সরকার এ লকডাউন দিয়েছেন। এদিকে ঘরে জমানো টাকা যা ছিল ফুরিয়ে গেছে। ঘরে ...
READ MORE