“ফাঁপরবাজ নেতা”।
( ফয়েজ আহমেদ এর নির্বাচনী ছোট গল্প)
তামান্না মোড়ে চলছে নির্বাচনী পথ সভা। পথ সভা রুপ নিয়েছে এক প্রকার জনসভায়। চারিদিকে শুধু মানুষ। রংপুর রোডটি জানজটে পরিনত হয়েছে। জানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ হিমসিম খাচ্ছে। সজিব প্রায় ১৫ মিনিট থেকে জানজটে আটকে আছে। সে তার গাড়ী নিয়ে কোন ভাবেই এগিয়ে যেতে পারছেনা। পথসভার মাইক থেকে বজ্রকন্ঠে বক্তৃতার শব্দ শোনা যাচ্ছে। একজন মেয়র প্রার্থী উন্নয়নের ফুলঝুড়ি তুলছেন তার বক্তৃতায়। তিনি বলে চলেছেন,ভাইয়েরা আমার আমি নির্বাচনে জয়লাভ করলে,সৈয়দপুরকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিব।
প্রার্থীর বক্তৃতা শুনে মনের অজান্তেই হাসছেন সজিব আহমেদ। এক জন মেয়র প্রায় কুড়ি বছরেও উন্নয়নতো দুরে থাক ড্রেনেজ ব্যবস্থারও কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেন নাই। একটু বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় সৈয়দপুরের মুল শহর। পাড়া-মহল্লার রাস্তা দিয়ে হাটা-চলা করা যায় না। সেখানে এই প্রার্থী শোনাচ্ছে উন্নয়নের গল্প। সজিব মনে মনে ভাবে আপনাকে তো জনসম্পৃক্ত কোন কাজেই দেখা যায়নি। চলমান করোনা’র মহা সংকটে এই প্রার্থী ছিল নিরুদ্দেশ।
সজিবের ভাবনায় এবার ছেদ পড়ে ওই প্রার্থীর বক্তৃতার আরেকটি প্রতিশ্রুতি শুনে। মেয়র প্রার্থী ওই ব্যাক্তি বলছেন,প্রিয় উর্দুভাষী ভাই ও বোনগন,আমি নির্বাচিত হলে আপনাদের ভাগ্য’র বিশাল উন্নয়ন ঘটাবো। বিশেষ করে আপনাদের আবাসন ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করবো। বিহারী ক্যাম্প বলে,কোন শব্দ থাকবে না। আমি ক্যাম্প গুলো বহুতল ভবনে রুপান্তরিত করবো। এবার আর হাসি থামাতে পারেনা সজিব।
তার মনে পড়ে বিহারীদের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন করবেন, পৌর এলাকা করবেন সাজানো বাগান,এমন ওয়াদা করে, কুড়ি বছর ক্ষমতায় ছিলেন একজন ফাঁপরবাজ নেতা। কিন্তু বাস্তবে কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেন নাই। ওই বিহারীদের একচেটিয়া ভোটে জয় লাভ করে তিনি বিহারীদেরই ক্ষতি করেছেন বেশী। তাছাড়া বিহারী নেতাদের অনেককেই দিয়েছেন তিনি আইক্কা মোটা বাশ। তাহলে এই মেয়র প্রার্থী কি করবেন? তিনি জয় লাভ করে বিহারীদের দিবেন অন্যরকম মোটা বাইক্কা বাশ।
সজিবের মন পড়ে,স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর আটকে পড়া এই বিহারীদের ভোট স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের অনুসারী নেতারা তাদের পক্ষে রাখতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাজনীতিসহ বিভিন্ন কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও নিচ্ছেন। কিন্তু সময় পাল্টেছে। বিহারীরা এখন অনেক সচেতন। তারা তাদের ভাল-মন্দ এখন যথেষ্ট বোঝে। তাদেরকে আর কোন ফাঁপরবাজ নেতার ফাঁপরবাজী বক্তৃতায় আটকানো যাবেনা।
সজিবের মনে পড়ে,একজন মেয়র কি ভাবে সব্জি বাজার নাটক করে সাধারন সব্জি ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করেছেন। একবার বাইপাশ একবার নয়া বাজার সিদ্ধান্ত দিয়ে কি ভাবে দুই জায়গার ব্যবসায়ীদের আর্থিক,সামাজিক ও মানষিক ক্ষয়ক্ষতি করেছেন। অথচ ওই মেয়র ইচ্ছে করলেই ওই সময়ের আলোচিত সব্জি বাজার নাটক অবসান করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফলশ্রুতিতে অনেক ব্যবসায়ী হাজতবাসও করেছেন। অনেকে হয়েছেন হয়রানীর শিকার।
সজিব মনে মনে ভাবে, প্রার্থীরা কি রকম মুখরোচক ফাঁপরবাজি বক্তৃতা করেন এবং মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে উর্দুভাষী অথ্যাৎ বিহারীদের বোকা বানিয়ে তাদের ভোট আদায় করে নেন । পরে জয় লাভ করে তাদের কল্যানের বদলে ক্ষতিই করেন। পাড়া-মহল্লায় সৃষ্ট বিবাদ নিস্পত্তি না করে জিইয়ে রাখেন।
মামলা-মোকদ্দা উসকে দেন। সজিব আরো ভাবে অনেকে বিহারী-বাঙ্গালী ধোয়া তুলে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নিজেরা লাভবান হওয়ার প্রচেষ্ট চালান যা অশুভ রাজনীতি,এর শেষ হওয়া দরকার।
সজিবের মনে পড়ে, নীলফামারী জেলার কৃতিমান সন্তান,দেশবরেন্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব,সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের কথা। তিনি এই অশুভ রাজনীতি উপলব্ধি করতে পেরে বিহারী কানেকশন নামে একটি কার্য্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন।
সেই কার্য্যক্রমে আসাদুজ্জামান নুর বিহারী নেতাসহ সকল বিহারীদের সাথে একাধীক মিটিং করে বাঙ্গালী-বিহারী ভাই ভাই তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই, দুরত্ব নাই মর্মে সকলকে একত্রিত করে বুঝিয়ে স্বাধীনতা’র মুল স্রোতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।পরিচালনা করেছিলেন, অসম্ভব বিহারী কানেকশন নামের একটি মিশন।
তার এই মিশন সফল হয়েছিল। তখন থেকেই বিহারী-বাঙ্গালী দুরত্ব অনেকটাই কমে যায়। বিহারীরা স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতিতে ফিরতে শুরু করে। আর বর্তমানে তা সিংহভাগে পৌছেছে বলে সজিবের মনে হয়। সজিব আসাদুজ্জামান নুরের এমন অভিনব কায়দায় বিহারীদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিতে যোগদান করার সফলতাকে স্যালুট জানান।
সজিব নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। তার কাছে মনে হয়,এখাকার বিহারী-বাঙ্গালী সকল মানুষ এখন অনেক সচেতন। তাছাড়া বর্তমান উর্দুভাষী নেতরা অনেক পরিপক্ক। তাদের আর বোকা বানানো যাবেনা। উন্নয়নের মহাসড়ক তারা চিনে ফেলেছে। তারা ফাঁপরবাজ নেতার ফাঁপরবাজ জ্বালাময়ী বক্তৃতায় আর কর্নপাত করবেন না। তারা বর্তমান সরকারের উন্নয়নে আস্থাশীল। তারা অবশ্যই দৃশ্যমান উন্নয়নের স্বার্থে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করবেন। আর এ ক্ষেত্রে তারা নৌকা প্রতীক কে বেছে নিবেন বলে সজিবের মনে হয়।
ট্রাফিক পুলিশের হুইসেলে চিন্তায় ছেদ পড়ে সজিবের। গাড়ীটা আস্তে আস্তে পার করে পুলিশ বক্সের সামনে রাখে। কৌতুহলবশত পথ সভা’র কাছে যান। সেখানে গিয়ে সজিব দেখতে পায়, তার পঞ্চগড়ের দুই বন্ধুকে। বন্ধুরা জানায়,তারা পথ সভা শুনতে এসেছে। তাদের মত রংপুর ও দিনাজপুর থেকে এসেছে আরো প্রায় দু’শো লোক।
সজিব আরো এগিয়ে যায়,দেখে,পাঁচ ইউনিয়ন থেকে প্রায় সহস্রাধীক লোকজন এই পথ সভায় হাজির। যারা কেহই এই পৌর এলাকার ভোটার নয়। পথ সভায় জনবল বেশী দেখানোর জন্য তাদের কে ভাড়া করে আনা হয়েছে। সজিব এমন নোংরা উদ্দেশ্য কে ঘৃনা করে। সে আর এক মিনিটও দেরী না করে গাড়ী নিয়ে চলে যায়।









