“পল্টিবাজ”।
— ফয়েজ আহমেদ।
জামাল সাহেব সভাপতি প্রার্থী। দলের কাউন্সিল চলছে। সভাপতি পদে আরও পাঁচ জন প্রার্থী আছেন। সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত করার জন্য ১৬৭ জন কাউন্সিলর তালিকা প্রস্তত করা আছে।
কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা সমঝোতার ভিত্তিতে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত করার চেষ্টা করছেন। আরিফও একজন কাউন্সিলর। সে আজ নেতা নির্বাচন করার জন্য,তার মতামত প্রদান করতে এসেছেন।
ইতিমধ্যে তিন জন প্রার্থী জামাল সাহেবকে সভাপতি হিসেবে সমর্থন করে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জামাল সাহেবের সভাপতি হওয়া’র পথে আর তেমন কোন বাধা নেই। এ দিকে একজন প্রার্থী রয়েছেন দোটানায়। তিনি বলছেন,মহির ভাই যদি জামাল সাহেবকে সমর্থন করেন,আমিও সমর্থন দিব।
মহির সাহেবের সিদ্ধান্ত পাকা। তিনি কোন ভাবেই জামাল সাহেবকে সমর্থন করবেন না। তিনি সাফ জানিয়ে দেন,কাউন্সিলর ভোটের মাধ্যমেই হবে সভাপতি পদের ফায়সালা। এদিকে সম্পাদক পদ নিয়েও চলছে নানা নাটকিয়তা।বিষটি নিয়ে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা।
কাউন্সিলে “সম্পাদক” পদের একজন প্রার্থী “কাউন্সিলর”তালিকা প্রণয়নে দূনীতির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করে বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি পক্ষের লোকজনসহ সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ তাদের বাড়ীর কাজের লোকজনকেও কাউন্সিল’র তালিকাভুক্ত করেছেন। ওই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করলে,তা বৈধ হবেনা।
“সম্পাদক” পদের ওই প্রার্থীর পক্ষে রীতিমত শ্লোগান দিচ্ছেন অনেকে। অপরদিকে আজকেই ভোট চাই মর্মে বেঁকে বসেছেন সভাপতি প্রার্থী জামাল সাহেব। তিনি কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের ভোট দেয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন।
কাউন্সিল ঘিরে অনাকাংখিত বিশৃঙ্খলা এড়াতে সজাগ জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারা সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি ও সম্পাদক পদের নাম ঘোষনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা জামাল সাহেবকে সভাপতি ও মাহবুবকে সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেন।
জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন,সভাপতি প্রার্থী মহির সাহেব। তিনি চিংকার করে বলেন,চাপিয়ে দেয়া কোন কমিটি তারা মেনে নেবেন না। একই সাথে তার পক্ষের কর্মী-সমর্থথকগন হট্টগোলের সৃষ্টি করেন। তারা জামাল ও মাহাবুবকে কোন ভাবেই মেনে নেবেন না।
বড় ধরনের গোলযোগ এড়াতে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কাউন্সিল স্থগিত ঘোষনা করেন। সভাপতি ও সম্পাদকের নাম কেন্দ্র হতে পরে ঘোষনা করা হবে,জানিয়ে চলে যান।
কাউন্সিলের যাবতীয় ঘটনা দাগ কাটে আরিফের মনে। আরিফ ভাবে কিসের এত লোভ। কেনইবা এত ক্ষমতা লাভের ইচ্ছা। এটাতো কোন জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়। আরিফের কাছে মনে হয়,দলের স্থানীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে,এত জটিলতা কোন ভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।
মাস খানেক পরেই কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা কমিটি মহির সাহেবকে সভাপতি ও মাহাবুব সাহেবকে সম্পাদক ঘোষনা করে পত্র ইস্যু করেন। তাদের দু’জন কে নিয়ে অফিসে চলছে, তুমুল তেলেসমাতি। আরিফ সব দেখছেন।
ফুলের মালা ও তোড়া নিয়ে এ দু’নেতাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন শত শত লোক। এত লোক মালা ও তোড়া নিয়ে এসেছেন, যা কল্পনাতীত। ধাক্কা-ধাক্কি করে,কে আগে মালা পড়িয়ে দিবেন, হাতে ধরিয়ে দিবেন ফুলের তোড়া, তার রীতিমত চলছে প্রতিযোগীতা।
অনেকে ভীড়ের মধ্যে লাথি-গুতা খেয়ে প্রিয় নেতার কদমবুচি করছেন। আরিফ লক্ষ্য করেন, এ যেন,ঈদের ছুটিতে রেল ষ্টেশন ও ফেরিঘাটে লোক সমাগম ও দৌড়-ঝাপের এক খন্ড চিত্র।
আরিফ একটা বিষয় স্পষ্ট ভাবে খেয়াল করেন,কাউন্সিলের দিন যারা এই দু’নেতার বিরোধীতা করেছিলেন, আপত্তিকর শ্লোগান দিয়েছিলেন,করেছিলেন কট্টর বিরোধীতা,,আজ এখানে তাদের সংখ্যাই বেশী। তারাই হুরাহুরি করছেন,কে আগে পড়াবেন ফুলেন মালা,দিবেন ফুলের তোড়া।
এদিকে যারা ওই দু’নেতার পক্ষে ছিলেন, দিয়েছিলেন অনুপ্রেরনা ও সাহস,তারাই আজ ঠাঁয় দাড়িয়ে আছেন। ওরা যেন আজ বড় অসহায়,অবহেলিত। প্রিয় নেতার কাছে তারা কোন ভাবেই ভিরতে পারছেন না।
আরিফ ভাবে,মানুষ এমন কি ভাবে হয় ? সকাল আর বিকালের মধ্যেই এরা কি ভাবে পাল্টে যায়? তাহলে কি এ কারনেই সমাজে “পল্টিবাজ”শব্দটির প্রচলন শুরু হয়েছিল। এরাই কি তাহলে আসল “পল্টিবাজ”।
আরিফ খেয়াল করেন,এই “পল্টিবাজ’দের মধ্যে অনেকে এ দু’নেতাকে নিয়ে করেছেন, বিভিন্ন কুরুচিপুর্ন মন্তব্য,খারাপ সমালোচনা। আর আজ তারা এ দু’নেতার করছেন, চরম বন্দনা। এছাড়াও তারা আজ জামাল সাহেব এর নামে করছেন,কঠিন ও আপত্তিকর সমালোচনা। আরিফের কাছে বিষয়টি আশ্চর্য্য জনক বলে মনে হয়।
সভাপতি ও সম্পাদক পদের ঘোষনা দেয়ার প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। মহির সাহেব ও মাহাবুব সাহেবের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় চুড়ান্ত হয়নি পুনাঙ্গ কমিটি। এদিকে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সভাপতি মহির উদ্দিন সাহেব। সভাপতি’র মৃত্যুতে দলের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। প্রিয় নেতার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন,দলের সকল নেতা,কর্মী ও সমর্থকগন। এছাড়া পুরো শহর ও গ্রাম জুড়ে চলছে শোকের মেলা।
সভাপতি মহির সাহেব এর মৃত্যু জনিত কারনে শুন্য হয় সভাপতির পদ। জামাল সাহেব আবার ও সভাপতি’র শুন্য পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার ঘোষনা দেন।
এদিকে আরও অনেকে সভাপতি পদ লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। জামাল সাহেব এর দলীয় প্রতিপক্ষগসহ তাদের নেতা-কর্মীরা জামাল সাহেবের পিন্ডি চটকাচ্ছেন। আরিফ লক্ষ্য করেন, সভাপতি পদটি লাভের জন্য আবারো মাঠ গরম হয়ে ওঠেছে।
সকল জল্পনা-কল্পনা’র অবসান ঘটিয়ে এবার জামাল সাহেব এর নাম সভাপতি হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। জামাল সাহেব আজ সন্ধ্যায় অফিসে আসবেন। অন্যান্যদের মত আরিফও অফিসে এসেছেন। অফিসে নেতা-কর্মীদের কার্য্যক্রম দেখে হতচকিয়ে যান আরিফ। আরে এতো আবার সেই পুরাতন খেলা। জামাল সাহেবের চারদিকে আজ শুধু মানুষ আর মানুষ। আরিফ লক্ষ্য করেন, আবারো ওই মানুষ গুলোই জামাল সাহেবের চারদিক ঘিরে আছেন। যারা সেই কাউন্সিল থেকেই জামাল সাহেব এর বিরোধীতা করে আসছিলেন,বিভিন্ন সময় তার পিন্ডি চটকিয়ে ছিলেন।
আরিফ লক্ষ্য করেন,তারা জামাল সাহেবের গলায় মালা পড়িয়ে দিচ্ছেন।কেউ ফুলের তোড়া দিচ্ছেন,প্রিয় নেতা জামাল সাহেবের হাতে। আবার অনেকে হুমড়ি খেয়ে কদমবুচি করছেন জামাল সাহেব এর পায়ে। এদিকে জামাল সাহেব এর দূ’দিনে যারা পাশে ছিলেন, তারা আজ অনেক দুরে,ঠায় দাড়িয়ে আছেন। প্রিয় নেতার কাছে কোন ভাবেই তারা ভিরতে পারছেন না।পল্টিবাজ’দের ভিড়ে তারা আজ সত্যি অসহায়।
আরিফের মাথা আর কাজ করেনা। মানুষ এমনও হয়। মনে একটা অজানা কষ্ট নিয়ে বাড়ীতে ফিরে আসেন আরিফ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম ফেসবুকে সময় কাটানোর জন্য মোবাইলটা ওপেন করেন।
এসময় আরিফ দেখতে পান, দেলোয়ার নামের এক যুবকের আবেগঘন মর্মস্পেষী এক স্ট্যাটাস।
দেলোয়ার নামের ওই যুবক তার ফেসবুক আইডি থেকে লিখেছেন,”ভাইজান,সবার মত আমিও কিছু টাকা যোগাড় করে ফুল নিয়ে গেছিলাম আপনার জন্য।কিন্তু পল্টিবাজদের ভিড় আর ধাক্কার কারনে আপনার কাছে পৌছাতে পারলাম না। অভিনন্দন ভাইজান আপনাকে।
দেলোয়ার নামের ওই যুবকের এক বুক কষ্ট নিয়ে লেখা, আবেগঘন ওই স্ট্যাটাস পড়ে,মনটা বিষন্নতায় ভরে ওঠে আরিফের।
সে মনে মনে ভাবে,পল্টিবাজ’দের এই যুগে আমরা সবাই সত্যিকার অর্থেই অসহয়ায়।আরিফ মন থেকে “পল্টিবাজ”দের ধিক্কার জানান।
Related Posts

কোভিড-১৯"
-ফয়েজ আহমেদ
বিশ্ব এখন অচল অসাড়
উৎপাদনের চাকা বেকার
উন্নয়ন ধারা থমকে আছে
কোভিড-১৯ ত্রাস চালাচ্ছে।
চলেনা আর গাড়ী ঘোড়া
ব্যবসা-বানিজ্যে দৈনদশা
মেশিন গুলো ধোয়া মোছা
দোকান-পাটে নাই সওদা।
বিশ্ব বাজার সাটার ডাউন
বিমান-জাহায লক ডাউন
মৃত্যুর মিছিল যখন তখন
বিশ্বে এখন ...
READ MORE
"হাঁস বিড়ালে খাইছে"
- ফয়েজ আহমেদ।
(বর্তমান প্রেক্ষাপটের একটি ছোট গল্প)
সেদিন ছিল সোমবার। ফকিরের হাট। সজিব হাটে গিয়ে হাস কিনবে। হাসের মাংস খুব প্রিয় সজিবের। বাজারের ব্যাগ নিয়ে মটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে হাটের ...
READ MORE
তেল হাওয়া"
(একটি ছোট রম্য রচনা)
মিলে সরিষা তেল নাই কথাটা শুনে একটা হোচট খায় সজিব। সে ভাবে করোনা প্রর্দুভাবের কারনে মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। হাট-বাজারে মানুষ কম আসছে। এখনতো সব ধরনের ...
READ MORE
"ভাষা"
ফয়েজ আহমেদ
বাংলা মোদের,মায়ের ভাষা
বাংলা মোদের,হৃদয় আশা,
বাংলা ভাষায় বলি কথা
বাংলায় দেখি,স্বপ্ন আশা।
বাংলা ছিল,মায়ের ভাষা
কেড়ে নিতে,চাইলো ওরা,
মুখে মোদের,চাইলো দিতে
বসায় ওদের,নিজের ভাষা।
গর্জে উঠল,আমার ভাইরা
বাংলা রবে,মোদের ভাষা,
মিছিল-মিটিং,করছে তারা
মানবো নাতো,ওদের কথা।
চলছে এবার,মিছিল মিটিং
সামাল দেয়া,হয়েছে কঠিন,
ছাত্র-জনতা,বেধেছে ...
READ MORE
"স্বাধীনতার রুপকার"
-ফয়েজ আহমেদ।
বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন ছিলনা। ছিল পরাধীন। নাম ছিল পুর্ব পাকিস্থান। ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দু'টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। একটি ভারত ও অপরটি পাকিস্থান। পাকিস্থান ...
READ MORE
"কবর পেল শাবনুর"
-ফয়েজ আহমেদ।
মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে অঝোরে কাঁদতে থাকে আবুল হোসেন। একটি মাত্র মেয়ে তার। আর কোন ছেলে পুলে নেই। অভাবের তাড়নায় মেয়েটিকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল আবুল হোসেন। মেয়েটিকে ...
READ MORE
"নেতা"
-ফয়েজ আহমেদ
নেতা,তুমি করনি সেবা,করেছ অবহেলা
আদর্শচূত হয়েছ তুমি,পালন করনি ওয়াদা,
নীতি ভেঙ্গেছ তুমি,নৈতিকতা দিছ বলি
জনতাকে দিছ ধোকা,শপথ ভেঙ্গে তুমি।
নেতা,পাশে রবে বলে,দুরে কেন আছ
তোমার দেয়া অঙ্গীকার,ভুলে কেন গেছ,
আশার বানী অনেক দিছ,ভুলে তা কি ...
READ MORE
"পক্ষ"
-ফয়েজ আহমেদ
ঘটনাস্হল খাতামধুপুর,রাজনীতি সৈয়দপুরে
এমনভাবে চলতে থাকলে,ক্ষতি সবার হবে,
দুইটা পক্ষ দুই দিকে,রাজনীতি করছে জানি
স্বচ্ছ রাজনীতি চাই মোরা,নয় অপরাজনীতি।
দড়ি ধরে টানাটানি,করছে দুই প্রভাবশালী
সত্য মিথ্যার চলছে লড়াই,জানি সবাই জানি,
দোষী কিনা যাছাই করা,নয়তো কারো ...
READ MORE
"ফাঁপরবাজ নেতা"।
( ফয়েজ আহমেদ এর নির্বাচনী ছোট গল্প)
তামান্না মোড়ে চলছে নির্বাচনী পথ সভা। পথ সভা রুপ নিয়েছে এক প্রকার জনসভায়। চারিদিকে শুধু মানুষ। রংপুর রোডটি জানজটে পরিনত হয়েছে। জানজট নিরসনে ...
READ MORESpread the love