ভালবেসে নাজমীনকে বিয়ে করেছিল তুহিন। ক’দিন আগে নাজমীন আর তুহিনের বিয়ের দশ বছর পুর্ণ হয়েছে। জাকজমক ভাবে বিয়ের দশ বছর পূর্তি করেছেন তারা। সংসার জীবনে তাদের কোন অর্পূন্নতা নেই। শুধু কোল জুড়ে আসেনি কোন সন্তান। একাধিক বার ডাক্তারের শরাপন্ন হয়েছে তুহিন ও নাজমীন।প্রতিবারই ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন,সমস্যাটা নাজমীনের। মা হতে পারবেন না নাজমীন ।
নাজমীন বিষয়টি নিয়ে মনোকষ্টে থাকত। তুহিন অনেক বুঝিয়েছে নাজমীনকে। বলেছে,সব আল্লাহর ইচ্ছা। তুমি এ নিয়ে দুঃখ করিও না। আল্লাহ্ চাইলে, একদিন আমরা বাবা-মা হবো। তাছাড়া আমরা তো অনেক ভাল আছি। নাজমীনকে আরো অনেক শ্বান্তনা দেন তুহিন। বলেন,চিন্তা করোনা, প্রয়োজনে আমরা একটা বাঁচ্চা দত্বক নেব। ওই বাঁচ্চা আমাদের পরিচয়ে মানুষ হবে। কিন্তু রাজী হয়নি নাজমীন।
এদিকে এই দশ বছর নাজমীনকে খুশী আর আনন্দে রাখার জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়েছে তুহিন। চেষ্টা করেছেন,নাজমীনকে সুখী রাখতে। নাজমীনকে খুব ভালেবাসে তুহিন। পারলে পৃথিবীর সব সুখ কিনে দেয়, নাজমীনকে। কিন্তু সামর্থ্য বলেও একটা কথা আছে। তার পরেও তুহিন সামর্থের সব টুকু দিয়ে চেষ্টা করেছেন, নাজমীনকে সুখী করতে। যখন যা বলেছে,তাই করেছেন। যা কিনতে বলেছে,তাই কিনে দিয়েছেন নাজমীনকে।
তুহিন নাজমীনের মনটা ভাল রাখতে সবসময় সচেষ্ট ছিলো।সিঙ্গাপুর,মালদ্বীপ,থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশেও ঘুরিয়েছেন নাজমীনকে। মতিঝিলে ছয় কাঠার একটা প্লট কিনে দিয়েছেন। নাজমীনের বাপের বাড়ি এলাকাও কিনেছেন জমি।ওই জমিতে দিয়েছেন ছয় তালা ফাউন্ডেশন।একতলা কম্পিলিটও করেছেন, তুহিন। সব কিছুই করেছেন, নাজমীনের নামে। নাজমীনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।
এদিকে নাজমীনের প্রয়োজনীয় সোনা,গহনা সব কিনে দিয়েছে তুহিন। কোন দিকেই কমতি কিছুই রাখেননি। এছাড়াও ব্যাংকে নাজমীনের নামে দশ লাখ টাকার একটা ডিপোজিটও করে দিয়েছেন। পাশাপাশি নাজমীন যাতে প্রয়োজন মত কেনাকাটা বা অন্যান্য খরচ করতে পারে তার ব্যবস্থাও করেছেন। নিজের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়েছেন নাজমীনকে। এক কথায় নাজমীন যেন, কষ্ট অনুভব না করে। কিন্তু বিধি বাম। এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি।
নাজমীন হয়ত আরো কোন অপ্রতুলতায় ভুগছিল। তাই একদিন তুহিনকে ছেড়ে চলে যায় নাজমীন। পাঠিয়ে দেয়, এক তরফা তালাকের নোটিশ।তুহিন ভেবে পায়না, নাজমীন কেন তাকে ছেড়ে গেল ? কি দোষ ছিল তার ? সে কি করেনি নাজমীনের জন্য ? কি ছিল তার ব্যর্থতা? ভেবে পায়না তুহিন। সে তো নাজমীনের ভালো থাকা নিয়ে সব সময় সচেতন ছিল । তাহলে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল নাজমীন ? নাজমীনের ডিভোর্স নোটিশ পেয়ে ভেঙ্গে পরে তুহিন।
নাজমীন কোন দিন মা হতে পারবেনা জানত তুহিন। তারপরেও তুহিন নাজমীনকে ভালবেসেছিল পাগলের মত। নাজমীন মা হতে না পারার কষ্ট যেন ভুলে থাকতে পারে, তার সব চেষ্টায় করেছে তুহিন। তবুও চলে গেল নাজমীন। তুহিন ভেবে পায়না কিছুই। তাহলে কি নাজমীন মা হতে না পারায় কষ্টে তুহিনকে ছেড়ে চলে গেছে ? যদি তাই হয়,তাহলে সোনা-গহনা,ডিপোজিট চেক, জমির দলিল পত্র,পাসপোর্ট তো নিয়ে যাওয়ার কথা নয়। তাহলে নাজমীন ও গুলো নিয়ে গেল কেন? কোন হিসেব মিলেনা তুহিনের।
নাজমীন চলে যাওয়ার পর থেকে মোবাইলটা বন্ধ। কোন ভাবে যোগাযোগ করতে পারেনা তুহিন। বাপের বাড়িতেও যায়নি। আত্মীয় স্বজন সব খানে খোজ নিয়েছে তুহিন। কোথাও নেই। তুহিন সব দিকে পাগলের মত খুজতে থাকে নাজমীনকে। এভাবে গড়িয়ে যায়, আরো পনের দিন। তুহিন চিন্তা করে,নাজমীনকে যে ভাবে হউক খুজে বের করবেন। নাজমীনকে দিয়ে এক তরফা তালাক বাতিল করাবেন। সে মানেনা,নাজমীনের এক তরফা তালাক।
নাজমীনকে ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি তুহিন। সে পাগলের মত সব জায়গায় খুজে বেরাচ্ছে নাজমীনকে।এরি মধ্যে একদিন তুহিন জানতে পারেন,তার মতিঝিলের জমিতে বিল্ডিংয়ের কাজ হচ্ছে। ছুটে যান তুহিন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন,নাজমীন জমিটা বিক্রয় করে দিয়েছেন। টাকা নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন মালয়েশিয়া। আর কোন দিন ফিরবেন না দেশে । হতাশ হয়ে পড়ে তুহিন। সে খোজ নিয়ে আরও জানতে পারেন,নাজমীন বাপের বাড়ি এলাকার ছয়তলা ফাউন্ডেশন দেয়া বাড়িটাও বিক্রয় করেছেন।
Related Posts

"পল্টিবাজ"।
-- ফয়েজ আহমেদ।
জামাল সাহেব সভাপতি প্রার্থী। দলের কাউন্সিল চলছে। সভাপতি পদে আরও পাঁচ জন প্রার্থী আছেন। সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত করার জন্য ১৬৭ জন কাউন্সিলর তালিকা প্রস্তত করা আছে।
কেন্দ্রীয় ও ...
READ MORE
"আজব স্বপ্ন"
-ফয়েজ আহমেদ।
গ্রামের নাম কাজলীয়া। সবুজ ঘেরা সুন্দর একটি গ্রাম। যতদুর চোঁখ যায়,শুধু প্রকৃতিক সবুজ লীলা ভূমি। গ্রমের লোকজন অত্যান্ত শান্তি প্রিয়। তারা সকলে ওই গ্রামে মিলে মিশে বসবাস করেন। ...
READ MORE
মাথা ভর্ত্তি একরাশ চিন্তা নিয়ে শহরের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় রফিক। বাড়িতে কোন টাকা নেই। বাজার যা আছে দু'এক দিনে শেষ হয়ে যাবে। এদিকে এখন তার পকেটে আছে মাত্র পঞ্চাস টাকা। ...
READ MORE
অনেক আশা করে সরকারী চাকুরীজীবি কনে বিয়ে করেছেন তোফা। মনে তার একটাই শ্বান্তনা,এবার সংসারটা হবে। সরকারী চাকুরীজীবি বউ। অন্তত লোভ থাকবেনা। তছরুপ করবে না টাকা-পয়সা । ভাঙ্গবে না সংসার। কখনও যাবেনা ...
READ MORE
"মেয়টাকে ভাল রেখ"
-ফয়েজ আহমেদ।
রাত দু'টো বাজে। হাইওয়ে ডিউটি চলছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠল। এত রাতে কে ফোন করছে। আরিফ পকেট থেকে ফোনটা বের করে। বাড়ী থেকে ফোন। স্ত্রী মাজেদা করেছে।এত রাতে ...
READ MORE
বৃদ্ধা শ্বাশুড়ী আর ছয় মাসের শিশু পুত্র নিয়ে খুব খাদ্য সংকটে আছে রহিমা বেওয়া। বাঁচ্চাটা শরীরে আসার তিনমাস পর মারা যায় রহিমার স্বামী কুবের আলী। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বাশুড়ী পোনা মাই ...
READ MORE
"আমি বাঙ্গালী"
-ফয়েজ আহমেদ
আমি বাঙ্গালী,বীর আমি,মহাবীর
দুঃসাহসী নির্ভীক,মৃত্যুন্জয় আমি,
ভয়,সেটা আবার কি?জানা নেইতো
আমি বঙ্গবন্বুর জ্বালাময়ী ভাষন,কবিতা।
৭মার্চের ঐতিহাসিক ডাক,নির্ভয়তা আমি
আষাঢ়ের বজ্রপাত,আমি কঠিন বজ্রশক্তি,
দুচোঁখে যুদ্ধের নেশা,আমি স্বাধীনতাকামী
বিজয় ছিনিয়ে নেয়া, রক্তিম হতিহাস আমি।
মনে নেই একাত্তর,আমি তার ...
READ MORE
"রাজ যোটক"
-ফয়েজ আহমেদ।
(ছোট একটি প্রেমের গল্প)
বিকালের ফ্লাইটে সৈয়দপুর আসছে পল্লবী। খবরটা শুনে ...
READ MORE
মাস্টার্স পাশ করেও কোন চাকুরী জোগাড় করতে পারেনি তৈমুর। রাত-দিন অনেক দালালের পিছনে ঘুরেছেন। একটা চাকুরীর প্রত্যাশায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মধ্যখানে তার গাটের টাকা গেছে জলে। সর্বশেষ এক ...
READ MORE
গ্রামে গঞ্জে ভিক্ষা করেন ছকিনা বেওয়া। বয়স তার ষাট পেরিয়েছে অনেক আগেই। স্বামীও মারা যাওয়ার প্রায় পনের বছর। হয়নি কোন বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা।দুই ছেলের সংসারে বউদের নাকানি-চুবানি খেয়েও ভালই ...
READ MOREফয়েজ আহমেদ এর ছোট গল্প “পল্টিবাজ”।
ফয়েজ আহমেদ এর ছোট গল্প “আজব স্বপ্ন”।
ফয়েজ আহমেদ’র গল্প “দু’ফোটা জল”।
ফয়েজ আহমেদ’র গল্প”জীবন নিয়ে জুয়া”।
ছোট গল্প “মেয়েটাকে ভাল রেখ”
ফয়েজ আহমেদ’র গল্প””তিরস্কার”।
“আমি বাঙ্গালী”
ফয়েজ আহমেদ’র ছোট একটি প্রেমের গল্প “রাজ যোটক”
ফয়েজ আহমেদ’র গল্প”ধোকা”।
ফয়েজ আহমেদ’র গল্প”ছকিনার স্বপ্ন ভঙ্গ”।